নিজস্ব প্রতিবেদক,দৈনিক নাসা নিউজ।
ঐতিহ্যবাহী মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার ব্যস্ত নগর জীবনের মাঝে অবস্থিত গোলারটেক মাঠ।আশপাশে বসতবাড়ি,দোকান,স্কুলল সব মিলিয়ে এলাকার প্রাণকেন্দ্র যেন এই মাঠটি।সারাদিন বিভিন্ন বয়সের মানুষের খেলা ও অবকাশ যাপনের স্থান এটি।কিন্তু এখন সেই মাঠই পরিণত হয়েছে অস্বস্তির কেন্দ্রবিন্দুতে।অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,দিনে যেখানে শিশুরা ফুটবল খেলছে,ঠিক সেই মাঠেই সূর্য ডোবার সাথে সাথে শুরু হয় মাদকসেবীদের আনাগোনা।গোল হয়ে বসে রাতের আকাশের নিচে চলে মাদকসেবন।
অন্য দিকে মাঠের একাংশ দখল করে রেখেছে দারু সসালাম থানার ডাম্পিংকৃত গাড়ির সারি।ঠিক মাঠের ফটকের পাশেও রাখা থাকে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার। থানার ডাম্পিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তা ও এই মাঠের অংশবিশেষ।
সরেজমিনে দেখা যায় গোলারটেক মাঠের এক প্রান্ত জুড়ে পড়ে আছে জব্দ করা গাড়ির সারি। এর মধ্যে কিছু গাড়ি বহুদিন ধরে একই জায়গায় পড়ে আছে, ময়লা ও ধুলোয় ঢেকে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব গাড়ি সরানোর জন্য একাধিকবার থানায় ও প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।অন্য দিকে সন্ধ্যা নামলেই দেখা যায় মাঠের বিভিন্ন স্থানে গোল হয়ে বসে আছেন অনেকে। এর মধ্যে অনেককেই দেখা যায় মাদকসেবন করছেন।স্থানীয়রা সন্ধ্যার পরে মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে আশংকায় দিন পার করছেন।
প্রতিদিন বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলতে আসেন স্থানীয় তরুণ মোঃ রুবেল।তিনি বলেন এই ডাম্পিংয়ের গাড়িগুলোর কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট লোহার টুকরো মাঠে পড়ে থাকে,ফলে অনেক সময় পা কেটে যায়।আবার পাশে রাখা ফুডকার্টের গাড়িগুলোতে বল লাগলেই ক্ষতি হয়। থানায় একাধিকবার জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি আরও বলেন এই মাঠে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।সন্ধ্যা হলেই মাঠের কোণায় কোণায় চলে মাদকসেবন।অনেকেই এখানে গাঁজা খায়।
এলাকার প্রবীণ ফুটবল কোচ আলী আহমেদ বলেন ডাম্পিংয়ের কারণে ঐ জায়গাগুলোতে জঙ্গল তৈরি হয়।ডাম্পিং একবার উঠে গিয়েছিল, কিন্তু আবার ফিরে এসেছে।আওয়ামী লীগের আমলে মেয়র এসে গাড়িগুলো সরাতে বলেছিলেন,তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি।
তিনি আরও বলেন এই মাঠে কোনো ঝামেলা হয় না,কিন্তু সন্ধ্যার পর কিছু তরুণ বসে হাবিজাবি খায়।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই তাদের বক্তব্যের বাস্তব চিত্র চোখে পড়ে। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে গোল হয়ে বসে মাদকসেবন করতে দেখা যায় অনেককে। মাদকসেবীদের জন্য সন্ধ্যার মাঠটি হয়ে উঠেছে যেন আদর্শ জায়গা।
দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমদাদ হোসেন বিপুল বলেন স্থায়ী ডাম্পিং স্পট না থাকায় বাধ্য হয়েই কিছু যানবাহন মাঠের পাশে রাখতে হচ্ছে। থানাটিও ভাড়া বাসায় অবস্থিত। এ কারণে ফোর্সের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।আমরা এই কারণে থানার জন্য স্থায়ী জায়গা খুঁজছি।
মাঠে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত।এটি বিনোদনের একটি কেন্দ্র। তবে আমরা নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি।সন্ধ্যার পরে তদারকি আরও বাড়ানো হবে।আমরা নিয়মিত মাদকসেবীদের ধরছি এবং ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) অধ্যাদেশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খেলার মাঠ বিনোদনের জায়গার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার অংশও বটে।শিশুকিশোরদের জন্য নিরাপদ মাঠ না থাকলে তারা ধীরে ধীরে বিপথে যেতে পারে।গোলারটেক মাঠের বর্তমান অবস্থা আজ রাজধানীর অনেক খেলার মাঠের প্রতিচ্ছবি।প্রশাসনের অব্যবস্থা, অবহেলা আর অপরিকল্পিত দখলের কারণে শহরের মাঠগুলো হারাচ্ছে তাদের প্রাণ।খেলার মাঠ জুড়ে ডাম্পিং আর রাতের আঁধারে মাদক,এই দ্বৈত সংকটে গোলারটেক মাঠ আজ ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে মৃত্যুপথে।
বিষয় : পুলিশ অপরাধ থানা রাজধানী দারুস সালাম
.png)
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক,দৈনিক নাসা নিউজ।
ঐতিহ্যবাহী মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার ব্যস্ত নগর জীবনের মাঝে অবস্থিত গোলারটেক মাঠ।আশপাশে বসতবাড়ি,দোকান,স্কুলল সব মিলিয়ে এলাকার প্রাণকেন্দ্র যেন এই মাঠটি।সারাদিন বিভিন্ন বয়সের মানুষের খেলা ও অবকাশ যাপনের স্থান এটি।কিন্তু এখন সেই মাঠই পরিণত হয়েছে অস্বস্তির কেন্দ্রবিন্দুতে।অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,দিনে যেখানে শিশুরা ফুটবল খেলছে,ঠিক সেই মাঠেই সূর্য ডোবার সাথে সাথে শুরু হয় মাদকসেবীদের আনাগোনা।গোল হয়ে বসে রাতের আকাশের নিচে চলে মাদকসেবন।
অন্য দিকে মাঠের একাংশ দখল করে রেখেছে দারু সসালাম থানার ডাম্পিংকৃত গাড়ির সারি।ঠিক মাঠের ফটকের পাশেও রাখা থাকে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার। থানার ডাম্পিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তা ও এই মাঠের অংশবিশেষ।
সরেজমিনে দেখা যায় গোলারটেক মাঠের এক প্রান্ত জুড়ে পড়ে আছে জব্দ করা গাড়ির সারি। এর মধ্যে কিছু গাড়ি বহুদিন ধরে একই জায়গায় পড়ে আছে, ময়লা ও ধুলোয় ঢেকে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব গাড়ি সরানোর জন্য একাধিকবার থানায় ও প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।অন্য দিকে সন্ধ্যা নামলেই দেখা যায় মাঠের বিভিন্ন স্থানে গোল হয়ে বসে আছেন অনেকে। এর মধ্যে অনেককেই দেখা যায় মাদকসেবন করছেন।স্থানীয়রা সন্ধ্যার পরে মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে আশংকায় দিন পার করছেন।
প্রতিদিন বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলতে আসেন স্থানীয় তরুণ মোঃ রুবেল।তিনি বলেন এই ডাম্পিংয়ের গাড়িগুলোর কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট লোহার টুকরো মাঠে পড়ে থাকে,ফলে অনেক সময় পা কেটে যায়।আবার পাশে রাখা ফুডকার্টের গাড়িগুলোতে বল লাগলেই ক্ষতি হয়। থানায় একাধিকবার জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি আরও বলেন এই মাঠে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।সন্ধ্যা হলেই মাঠের কোণায় কোণায় চলে মাদকসেবন।অনেকেই এখানে গাঁজা খায়।
এলাকার প্রবীণ ফুটবল কোচ আলী আহমেদ বলেন ডাম্পিংয়ের কারণে ঐ জায়গাগুলোতে জঙ্গল তৈরি হয়।ডাম্পিং একবার উঠে গিয়েছিল, কিন্তু আবার ফিরে এসেছে।আওয়ামী লীগের আমলে মেয়র এসে গাড়িগুলো সরাতে বলেছিলেন,তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি।
তিনি আরও বলেন এই মাঠে কোনো ঝামেলা হয় না,কিন্তু সন্ধ্যার পর কিছু তরুণ বসে হাবিজাবি খায়।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই তাদের বক্তব্যের বাস্তব চিত্র চোখে পড়ে। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে গোল হয়ে বসে মাদকসেবন করতে দেখা যায় অনেককে। মাদকসেবীদের জন্য সন্ধ্যার মাঠটি হয়ে উঠেছে যেন আদর্শ জায়গা।
দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমদাদ হোসেন বিপুল বলেন স্থায়ী ডাম্পিং স্পট না থাকায় বাধ্য হয়েই কিছু যানবাহন মাঠের পাশে রাখতে হচ্ছে। থানাটিও ভাড়া বাসায় অবস্থিত। এ কারণে ফোর্সের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।আমরা এই কারণে থানার জন্য স্থায়ী জায়গা খুঁজছি।
মাঠে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত।এটি বিনোদনের একটি কেন্দ্র। তবে আমরা নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি।সন্ধ্যার পরে তদারকি আরও বাড়ানো হবে।আমরা নিয়মিত মাদকসেবীদের ধরছি এবং ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) অধ্যাদেশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খেলার মাঠ বিনোদনের জায়গার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার অংশও বটে।শিশুকিশোরদের জন্য নিরাপদ মাঠ না থাকলে তারা ধীরে ধীরে বিপথে যেতে পারে।গোলারটেক মাঠের বর্তমান অবস্থা আজ রাজধানীর অনেক খেলার মাঠের প্রতিচ্ছবি।প্রশাসনের অব্যবস্থা, অবহেলা আর অপরিকল্পিত দখলের কারণে শহরের মাঠগুলো হারাচ্ছে তাদের প্রাণ।খেলার মাঠ জুড়ে ডাম্পিং আর রাতের আঁধারে মাদক,এই দ্বৈত সংকটে গোলারটেক মাঠ আজ ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে মৃত্যুপথে।
.png)
আপনার মতামত লিখুন