নলডাঙ্গায় খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা
ইউসুফ হোসেন,নাটোর। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন খেজুরগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গাছিরা।হেমন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় যখন পাঁকা ধানের সোনালী আভা চারদিকে নবান্নের বার্তা ছড়াচ্ছে,তখনই শুরু হয়েছে শীতের আগমনী প্রস্তুতি।ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের কোমল রশ্মি যখন ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুতে খেলা করে, তখনই প্রকৃতি জানান দিচ্ছে-শীত আসছে, আর তার সঙ্গে আসছে খেজুরের রসের মৌসুম।কার্তিক ও অগ্রহায়ণ-এই দুই মাস বাঙালির নবান্ন উৎসবের মাস। নতুন ধানের পিঠা-পায়েসের আনন্দে আত্মীয়তার বন্ধন যেমন দৃঢ় হয়, তেমনি এই উৎসবের অপরিহার্য উপকরণ হলো খেজুরের গুড়। সেই গুড় তৈরির প্রস্তুতি এখন পুরোদমে চলছে নলডাঙ্গায়।নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কিষোয়ার হোসেন জানান, উপজেলায় প্রায় ৩৬ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার ৬০০টি খেজুরগাছ রয়েছে।এর মধ্যে ৮ হাজারটি গাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত।চলতি মৌসুমে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬৮ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য আনুমানিক সাড়ে ৫ কোটি টাকা।স্থানীয় গাছিরা জানান আশ্বিনের শেষ ও কার্তিকের শুরু থেকেই তারা গাছ ছাঁটাই ও রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নেন। নলডাঙ্গার গুড়ের মান ভালো হওয়ায় এখন অনলাইন ব্যবসায়ীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।অনেকেই গাছিদের বাড়ি থেকেই নগদ টাকায় গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।এতে গাছিদের বাজারে যেতে হয় না,ফলে পরিবহন ও আড়তের খরচ সাশ্রয় হচ্ছে।উপজেলার কয়েকজন গাছি বলেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নলডাঙ্গার গুড় এখন শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই নয়,বিদেশেও পৌঁছে যাচ্ছে।এতে তারা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন এই নতুন বাণিজ্যিক সুযোগে।তবে গুড়ের পাশাপাশি অনেকেই খেজুরের কাঁচা রস পান করতে ভালোবাসেন। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।কারণ বাদুড় বা অন্যান্য প্রাণীর লালা মিশে গেলে রসটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।হরিদা খলসী গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হোসেন জানান প্রায় চার বছর আগে তার তিন বছরের ছেলে শাফি খেজুরের কাঁচা রস পান করার পর নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সবাইকে রস খাওয়ার আগে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন খেজুরের রস সংগ্রহের সময় হাড়ি অবশ্যই জাল বা নেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এতে বাদুড় বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব হয়, ফলে রস থাকে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ।প্রকৃতির উপহার এই খেজুরের রস ও গুড় শুধু গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখে না,এটি বাঙালির শীতকালীন ঐতিহ্যেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বিশুদ্ধতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা।